সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের গল্প লেখা হোক ২০২৫-এর নতুন পাতায়

সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের গল্প লেখা হোক ২০২৫-এর নতুন পাতায়

২০২৫- আরম্ভ এক নতুন উদ্যমের

এ এক নতুন সকাল, এ এক নতুন আরম্ভ- সফল হোক ২০২৫-এর নব সূর্যোদয়। যা চলে গেছে তা হয়ে গেছে শেষ, সময় ফিরে আসবে না। কিন্তু সামনেও পড়ে আছে একটা লম্বা বছর, যেন সময়ের একটা নতুন পাতা যেখানে শুরু করা যায় সাফল্যের গল্প লেখা। সময় আমাদের সামনে চলতে শেখায়, পিছন ফিরে না তাকিয়ে সেই পুরনো বছরের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে নতুন বছরের প্রথম থেকেই তৈরি করা যাক নতুন রুটিন। নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা নয়, কারণ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা কঠিন, বরং ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করে তাকে পূরণ করা হোক এ বছরের স্ট্র্যাটেজি।

 

২০২৫- আরম্ভ এক নতুন উদ্যমের; শারীরিক সক্ষমতা ও মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি

পড়াশোনা ভালো করে করতে চাই সুস্থ শরীর ও একাগ্র মন। শারীরিক স্বাস্থ্য যদি রুগ্ন হয় তবে সব কিছুতেই বাধা আসে, পড়াশোনার ক্ষেত্রেও তাই। সেইজন্য ২০২৫-এর প্রথম অঙ্গীকার হোক শরীর মনের সুস্থতা। মাঠে গিয়ে খেলাধূলা করা অথবা যোগাভ্যাস নাহলে অন্তত পক্ষে নিয়মিত হাঁটা, কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই দরকার। শরীর সুস্থ থাকলে মনও চনমনে থাকে এবং নতুন কিছু শেখার উৎসাহ পাওয়া যায়। কোন নিরাশাব্যঞ্জক ভাবনা নয়, মনে সদর্থক ভাব রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে শান্ত মনই সবসময় জয়ী হয়। ছাত্রছাত্রীদের কাজই হচ্ছে পড়াশোনা করা, তাই নিজের কর্মে একাগ্র থাকতেই হবে।

 

একাগ্রতার সবচেয়ে বড় শত্রু বর্তমানে মোবাইল ফোন এবং স্যোশাল মিডিয়া- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্‌ অ্যাপ ইত্যাদি। পড়তে বসেও ক্ষণে ক্ষণে এগুলো চেক না করলে কেমন একটা মানসিক অস্থিরতা হতে থাকে। এই বিপদ থেকে বাঁচতে একটা মোবাইল মুক্ত সময় স্থির করতে হবে যখন মোবাইলের নোটিফিকেশন সাউন্ড অফ থাকবে এবং একটানা ঘন্টাখানেক মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। এইভাবে একটানা পড়ার পর বিরতি হিসেবে পাঁচ- দশ মিনিট মোবাইল দেখা যেতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে পড়ার সময়টা বাড়িয়ে মোবাইলের সময়টা কম করতে হবে। মনকে এইভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা একদমই কঠিন হবে না।

 

২০২৫- আরম্ভ এক নতুন উদ্যমের; সময়ের সদ্ব্যবহার

ধরা যাক একজন ছাত্র বা ছাত্রীর বর্তমানে কোন উপার্জন নেই, অর্থনৈতিক জোর নেই, সামাজিক প্রতিষ্ঠা নেই- তাহলে তার আছেটা কি যা দিয়ে সে তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে? তার হাতে আছে এক মূল্যবান সম্পদ—সময়! সেই লোকটিই নিঃস্ব যার হাতে আর সময় নেই। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থ, মান, প্রতিষ্ঠা সব অর্জন করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের সেই মূল্যবান সময়টুকু আছে যা আজ কাজে লাগালে ভবিষ্যৎ জীবন হবে নিশ্চিন্ত। সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার এবং তাতে প্রবেশ করার একটা সময়সীমা আছে। সে বয়সটা পার হয়ে গেলে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। তাই এটাই সময় সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রাণপাত করার, কারণ ‘সময় গেলে সাধন হবে না’।

 

২০২৫- আরম্ভ এক নতুন উদ্যমের; পরীক্ষার তালিকা তৈরি

বছরের শুরুতে যেমন নতুন ক্যালেন্ডার পাওয়া যায় তেমনি ছাত্রছাত্রীদেরও পরীক্ষার ক্যালেন্ডার তৈরি করে নেওয়া উচিত। কোন কোন পরীক্ষার জন্য সে প্রস্তুত হবে, এ বছর কি কি পরীক্ষা হওয়ার কথা আছে, পরীক্ষাগুলোর তারিখ ঘোষিত হয়ে থাকলে সেই তারিখ অথবা সম্ভাব্য তারিখ নির্দিষ্ট করে সেই অনুযায়ী পড়া আরম্ভ করার এই তো শুভ মুহূর্ত! পড়াশোনা হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত ভাবে। কোন পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বা কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে তা নিজের মত করে বুঝে নিয়ে পদ্ধতিগত পড়াশোনা করতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকলে, আকস্মিক আবেগে এখান থেকে ওখান থেকে যা খুশি পড়তে লাগলে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই প্রত্যেকদিনের জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্য স্থির করে নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পড়লে উন্নতি হতে বাধ্য। যেন প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা যায়, যেন প্রতিদিনই আগের দিনের থেকে উৎকর্ষ অর্জন করা যায়- এই তপস্যাই সাফল্য এনে দেবে শিক্ষার্থীর জীবনে।

 

২০২৫- আরম্ভ এক নতুন উদ্যমের; সামাজিক আদান- প্রদান

সরকারি চাকরির পরীক্ষার্থী মানে কোন খাঁচায় বন্দি জীব নয়। স্বাভাবিক জীবনের থেকে দূরে পালিয়ে বেশি দিন থাকা যায় না, তখন মন উসখুশ করে সব নিয়মশৃঙ্খলা ভেঙে স্বাভাবিক জীবনের মূলস্রোতে ফিরে যেতে। কিন্তু এই প্রস্তুতিপর্বে লোকে দেখা হলেই যে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ মিশিয়ে বলতে চায়- আর কবে চাকরি পাবে? সরকারি চাকরির চেষ্টা করতে থাকা ছাত্র বা ছাত্রীটির অন্য সহপাঠীরা হয়তো বেসরকারি ক্ষেত্রে ততদিনে অনেকটা পথ পার করে এসেছে। এসব কথা শিক্ষার্থীর মনোবল ভেঙে দেয়, তাই তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেকে গৃহবন্দি করে ফেলে। কিন্তু সরকারি চাকরির সম্মান, প্রতিপত্তি, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তার সঙ্গে বেসরকারি চাকরির কোন তুলনাই চলে না। কাজেই সেরা চাকরিটি পেতে হলে নিজেকে তো নিংড়ে দিতে হবেই! তাই লোকের কথার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে সহজ ভাবে সকলের সঙ্গে মিশতে হবে। পরীক্ষার বেশি দেরি থাকলে পারিবারিক জমায়েতেও অংশ নেওয়া উচিত। তবে শিয়রে সংক্রান্তি পরীক্ষা থাকলে আর একটুও সময় নষ্ট করা চলে না। আসলে যাই হোক না কেন কখনো নিজের উদ্দেশ্যটাকে ভোলা যাবে না। লক্ষ্যে অবিচল থাকা এবং সেইসঙ্গে জীবনধারাকেও সেই পথে পরিচালিত করা হোক ২০২৫-এর শ্রেষ্ঠ অঙ্গীকার, কারণ সরকারি চাকরি প্রাপ্তি কোন ছেলের হাতের মোয়া নয়, তা এক দীর্ঘ পথ, এক জীবনচর্যা!

Published on Jan 15, 2025